পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, অভিনয়শিল্পীর তূর্যার জিডি

পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, অভিনয়শিল্পীর তূর্যার জিডি

 

 বিনোদন ডেস্কঃ বেশ কয়েকদিন ধরেই শুটিং সেটের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে খবরের শিরোনামে রয়েছেন ছোট পর্দার দুই অভিনয়শিল্পী রুকাইয়া জাহান চমক ও আরশ খান। পাল্টাপাল্টি অভিযোগে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন তারা। বিষয়টি এখনো সমাধান হয়নি।
আদিব হাসান পরিচালিত ‘শ্বশুর বাড়িতে প্রথম দিন’ নাটকের দ্বিতীয় দিনের শুটিংয়ে দুজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে ঘটনার সূত্রপাত। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের কয়েক দিনের মধ্যে জানা গেল, অভিনেতা আরশ খান ও পরিচালক আদিব হাসানের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন অভিনেত্রী চমক। জিডি নং ১৪৭২।
এ নিয়ে তেলপাড় নাটকপাড়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ চর্চা হচ্ছে। এরই মধ্যে তূর্যা সৈয়দ নীল নামের এক তরুণ অভিনয়শিল্পী রিদম খান শাহীন নামের এক নির্মাতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। এ নিয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় নির্মাতার নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে  জানান তিনি।
জানা গেছে, পূবাইল মেঘলা পিকনিক স্পটে গত ২২ জুলাই ‘লেস ফিতা’ নামের একটি নাটকের শুটিংয়ে পরিচালক রিদম খান শাহীন গভীর রাতে তূর্যাকে তার রুমে ডাকেন একান্ত মুহূর্ত কাটানোর জন্য। অভিনয়শিল্পী তাদে আপত্তি জানালে তার গায়ে হাত দেন এই নির্মাতা। পরবর্তীতে রাত দেড়টার দিকে ওই অভিনয়শিল্পী কাউকে কিছু না বলে নিজের নিরাপত্তার জন্য শুটিং স্পট থেকে বেরিয়ে আসেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই অভিনয়শিল্পী বলেন, এর আগেও এই নির্মাতার সঙ্গে একটি নাটকে কাজ করেছিলাম। তবে নাইটে কখনো কাজ করা হয়নি। এবারই প্রথম ডে-নাইট কাজ করেছি। ২১ জুলাই রাতে আমরা শুটিংয়ের জন্য যাই। যাওয়ার পর রাতে সবাইকে নিয়ে স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসেন পরিচালক। তখন তিনি মদ্যপান অবস্থায় ছিলেন। আমাকে মদ খাওয়ার জন্য বার বার বলছিলেন। কিন্তু আমি অনাগ্রহ দেখিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে যাই। এ নাটকের দুজন ক্যামেরাম্যান সে রাতে আমাকে অনেক বার ফোন করে বিরক্ত করেছিল। তাদেরও ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল।
নির্মাতার বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনে তূর্যা বলেন, রিদম খান শাহীন আমার অনুমতি ছাড়া শরীরে হাত দিয়েছেন। তখন আমাকে তার রুমে যাওয়ার জন্য বলেন। আমি জানতে চাই—আপনার রুমে কেন যাব? তখন তিনি জানান, তোমাকে নাটকে মূল চরিত্রে নিয়েছি, আমার চাহিদা পূরণ করবে না? তাকে জানাই আপনি তো এসব বলে আমায় কাজে নেননি। কথার একপর্যায়ে তিনি আমার শরীরে হাত দিয়েছিলেন।
যোগ করে তিনি আরও বলেন, তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় পরিচালক জানান মূল চরিত্র থেকে আমাকে বাদ দেয়া হবে। সেসময় আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন তিনি। আমি আম্মুকে ফোন দিতে গেলে সে আমার ফোন হাত থেকে কেড়ে নেয়। এর পর চলে যায়। পরবর্তীতে রাত দেড়টার একটু আগে তার রুমে যাওয়ার জন্য আবার ডেকেছিলেন।
তখন তাকে শান্ত করার জন্য বললাম আপনি যান আমি আসতেছি। এ বলে আমি লাগেজ নিয়ে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে আসি শুটিং সেট থেকে। সেদিন আমি একা বের হয়নি। ২১ তারিখ রাতে পরিচালক অন্য একটি নবীন মেয়ের সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিকভাবে লিপ্ত হয়েছিলেন, সেই মেয়েটিও আমার সঙ্গে বেরিয়ে আসে তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এখন আমাকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমার নিরাপত্তার জন্য জিডি করেছি।
এ ব্যাপারে জানতে নির্মাতার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি এই নির্মাতা তরুণ এই অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে শুটিং থেকে ৬৫ হাজার টাকা চুরি করে পালানোর অভিযোগ এনে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে এই শিল্পীর দাবি, নির্মাতার অভিযোগ সত্য নয়।
তূর্যা বলেন, তিনি আমাকে তার রুমে ডেকেছিলেন। তবে তার রুমে না গিয়ে আমি শুটিং সেট থেকে বেরিয়ে আসি। তাহলে টাকা নেব কীভাবে? তিনি নিজের দোষ ঢাকতে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন।
সেদিনের ঘটনাটি নাট্যনির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর ও অভিনয় শিল্পী সংঘের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রাণ রায়কে অবগত করেছিলেন তূর্যা। তবে পরবর্তীতে সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি এই শিল্পী। যার কারণে বিষয়টি আর সাংগঠনিকভাবে সমাধানের দিকে আগায়নি।
তরুণ অভিনয়শিল্পী তূর্যা সৈয়দ নীল শিশুশিল্পী হিসেবে শোবিজে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ‘লাভ ঘড়’, ‘কি করে বলবো তোমায়’, ‘প্রেম বাজ’, ‘ঘুরে দেখা’, ‘রঙবেরঙের মানুষ’, ‘তিথির সংসার’, ‘বিজলী’সহ বেশকিছু নাটকে অভিনয় করেন।
কাজ করছেন ‘ইউসুফ আলী খান’ নামের একটি সিনেমায়। এর প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমাটি প্রযোজনাও করছেন তিনি। এছাড়াও ‘ঘুরে দেখা’, ‘লাভ ঘর’, ‘কাঠগোলাপ’সহ বেশ কয়েকটি নাটক প্রযোজনাও করেছেন বলে জানান তিনি।