কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্পে মুখোমুখি অবস্থানে আরসা-আরএসও : সন্দেহভাজন ৬ জন আটক
সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩
মোহাম্মদ ফরিদ, কক্সবাজার:
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় থমথমে অবস্থা চলছে। আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে কয়েকটি জায়গায় আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সন্ত্রাসীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। অপহরণ আতঙ্কে আশ্রয় শিবিরের অন্তত ৩০ জন মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) ক্যাম্প-৮ ছেড়ে আশপাশের ক্যাম্পে আত্মগোপন করেছেন। এদিকে শুক্রবার গভীর রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৫ রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৬ রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারীকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। আটককৃতরা হলেন- উখিয়ার বালুখালী ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আরিফ উল্লাহ (৩০), ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এনাম উল্লাহ(২৩), ৮ ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ফোরকান (২৩), মোহাম্মদ জুবায়ের (২৯) ও বি রহমান (৩৪)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালানো হচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে। পরিস্থিতি এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) আরসা ও আরএসও এর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে পাঁচ আরসা সদস্য নিহত হন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ) এইচ-৪৯ ব্লকের বাসিন্দা আনোয়ার ছাদেক (২২), একই আশ্রয়শিবিরের এ-২১ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ হামিম (২১), বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১০) এইচ-৪২ ব্লকের বাসিন্দা মো. নজিবুল্লাহ (৩২), মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৩) বি-১৭ ব্লকের বাসিন্দা নুরুল আমিন (২২) ও অজ্ঞাতনামা ২৫ বছর বয়সী আরেকজন রোহিঙ্গা। এ ঘটনার ৯ ঘণ্টা পর শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১১) ছুরিকাঘাতে ছানাউল্লাহ (৪৩) নামের আরেক রোহিঙ্গা যুবককে হত্যা করা হয়। তিনিও আরসা সদস্য বলে নিশ্চিত করে পুলিশ। গোলাগুলির সময় আরএসও সদস্যরা ছানাউল্লাহকে তুলে নিয়ে যায়, ৯ ঘণ্টা পর ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্তের পর লাশগুলো শুক্রবার রাতে আশ্রয়শিবিরে দাফন করা হয়। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, শুক্রবার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ছয় রোহিঙ্গা নিহতের ঘটনায় শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৫৭ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১৬ জন আরসা সদস্য, একজন আরএসও সদস্য, ১ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।