সীতাকুণ্ডে ৮মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যার অপরাধে গ্রেফতার ২

সীতাকুণ্ডে ৮মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যার অপরাধে গ্রেফতার ২


সীতাকুণ্ড প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ রোকসানা আক্তার (২০) কে হত্যার অপরাধে দুই জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর বাঁশবাড়িয়া এলাকার রহমতের পাড়া গ্রামের মৃত আবুল মুনছুর এর পুত্র ও নিহতের ভাশুর গোলাম মোস্তফা (৪৫)  এবং গোলাম মোস্তফার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৩০)।
গত বুধবার ২৪ মে উপজেলার ৬নং বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর বাশঁবাড়িয়া এলাকার রহমতের পাড়া গ্রামের আনোয়ার কিবরিয়ার ঘরে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে হত্যা করার পর এটিকে নিহতের ভাশুর গোলাম মোস্তফা এবং তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার বৈদ্যুতিক শর্ট সাকির্টে অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে। এদিকে ঘটনার পর ঐদিন রাতে স্বামী আনোয়ার কিবরিয়া নিহতের ভাশুর গোলাম মোস্তফা এবং গোলাম মোস্তফার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে নিহতের ভাশুর গোলাম মোস্তফা ও গোলাম মোস্তফার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার রোকসানা আক্তার কে হত্যা করছে বলে স্বীকার করে।
এবিষয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তোফায়েল আহমেদ বলেন, গত বুুধবার আমি সীতাকুণ্ড মডেল থানাধীন কুমিরা ঘটে অবস্থানকালে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে জানতে পারি যে, সীতাকুণ্ড মডেল থানাধীন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের রহমতের পাড়া গ্রামের আনোয়ার কিবরিয়ার বসত ঘরে তার স্ত্রী আগুনে পুড়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে থানা এলাকায় মোবাইল ডিউটিতে কর্তব্যরত এসআই মোঃ নাছরুল্লাহ রুবেলকে সঙ্গীয় ফোর্স সহ ঘটনাস্থলে পাঠাই। পূর্বের নির্দেশ মোতাবেক উক্ত এসআই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনাস্থলের পারিপার্শ্বিকতা সহ নিহত রোকসানার লাশের ছবি আমাকে প্রেরণ করেন। লাশের ছবি দেখে আমার সন্দেহ হওয়ায় আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং প্রতিবেশী সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করি। ঘটনাস্থলে সাদা চোখে অদৃশ্য কিছু আলামত আমি ব্যক্তিগত হেফাজতে নেই। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মহিলা পুলিশ দিয়ে মৃত দেহটি উলট-পালট করে পর্যবেক্ষণ করি। পর্যবেক্ষণকালে লাশের মাথায় ৩টি ক্ষত আছে যা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এছাড়াও মৃতদেহ খাটের উপরে পড়ে থাকার ধরণ দেখে আমি নিশ্চিত হই যে, এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা। পরবর্তীতে মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট সহ অন্যান্য কার্যক্রম শেষে নিহতের ভাশুর গোলাম মোস্তাফা, স্বপ্না আক্তার ও তার স্বামী আনোয়ার হোসেন কিবরিয়াসহ তিনজনকে জিজ্ঞসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেই। ঘটনাস্থল হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণাদি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তেতে প্রাপ্ত তথ্যাদি গুলো তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ন্যানো বিশ্লেষণ করে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে নিজেরা অবগত হই। জিজ্ঞাসাবাদের নিমিত্তে গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ও স্বপ্নার প্রদত্ত তথ্যাদি সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়ায় এবং এলোমেলো ভাবে কথাবার্তা বলায় মোস্তফা ও স্বপ্নাকে সন্দিগ্ধ আসামী হিসাবে ট্রিট করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে উভয়ে স্বীকার করে যে, তাহাদের সাথে নিহত রোকসানার সাথে সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘ দিন বিরোধ চলতেছিল। উক্ত বিরোধের জের ধরে ঘটনার ৫ দিন আগে বাড়ীর উঠান থেকে পানি নিষ্কাশন এর জন্য গোলাম মোস্তফা একটি ড্রেন করেছিল। কিন্তু নিহত রোকসানা ড্রেনটি বন্ধ করে দেয়। উক্ত বিষয় নিয়ে ঝঁগাড়া বিবাদ হয়। মোস্তফা ও স্বপ্না দুইজনেই নিহত রোকসানাসহ তার স্বামীকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। প্রথমে তারা সিদ্ধান্ত নেয় রোকসানাকে মারবে এর পরে সুযোগ বুঝে তার স্বামীকে মারবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন আসামী দুইজন পরিকল্পনা করে তার স্বামী যখন বাড়ীতে থাকবে না তখন ঘরের ভিতর রোকসানাকে মেরে ফেলবে এবং ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করবে। এই আলোকে আসামী মোস্তফা বাঁশবাড়িয়া বাজারস্থ ছুট্টু সওদাগরের মুদি দোকান থেকে ৯০ টাকার কেরসিন তৈল এবং স্বপন এর ফার্মেসী থেকে ৩০ টাকা দিয়ে হ্যান্ডগ্লাফস কিনে বাড়ীতে আসে। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে মোস্তফা নিজ বসত ঘরে মধ্যেই হ্যান্ডগ্লাফস পরিধান করে এক হাতে একটি গাছের সাইজ কাঠ নেয় তার স্ত্রী কেরসিন তৈলের বোতল নেয় তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। নিহত রোকসানার ঘরের দরজা হালকা খোলা দেখেতে পেয়ে ভিতরে প্রবেশ করে নিহত রোকসানাকে খাটের উপরে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়ে গোলাম মোস্তফা মাথার পিছনে কাঠ দিয়ে বারি মারে তখন রোকসানা খাটের উপরে পড়ে যায়। তার পর লেপ কাথা মুড়িয়ে দিয়ে ঘরের ভিতর অবস্থান করে। এই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হোসনেআরা সব দেখে ফেলায় তাকে ও তার বোবা মেয়েকেসহ মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং হোসনেআরাকে তার বসত ঘরে ভিতর রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আসামীদ্বয় আবারও প্রায় দুপুর ১টার দিকে নিহত রোকসানার বসত ঘরে প্রবেশ করে কেরসিন তৈল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে আসে। তারা মনে করেছিল যে, মানুষ দুপুর বেলা ভাত রান্না করে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে মৃত্যু হয়েছে মর্মে চালিযে দিবে। কিন্তু গ্যাস সিলিন্ডার পর্যন্ত আগুন যাওয়ার আগেই ধোঁয়া দেখে প্রতিবেশীরা আসতে দেখে আগুন বন্ধ করে। এরপর কারেন্ট এর শর্ট বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রত্যক্ষ সাক্ষীসহ আটককৃত আসামীদ্বয় সীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে আসামী গোলাম মোস্তফা ও স্বপ্নার বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেন।